HomeBusiness & Economyঅর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ঋণ-অর্থ একমাত্র ভরসা : ২০২৫-এর কেন্দ্রীয় বাজেট

অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ঋণ-অর্থ একমাত্র ভরসা : ২০২৫-এর কেন্দ্রীয় বাজেট

WhatsApp Group Join Now

ঋণ-অর্থ পরিকাঠামোতেই: ২০২৫-এর কেন্দ্রীয় বাজেট

আগামী অর্থ বছরে রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্য জিডিপি-র ৪.৪ শতাংশ। এই ঘাটতি পূরণ করতেই বাজার থেকে সরকার ধার করবে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য আয়করে ছাড় দেওয়া হয়নি। এখনও পরিকাঠামোয় খরচকেই মোদী সরকার অর্থনীতিতে গতি আনার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে দেখছে বলে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন দাবি করলেন।

বাজেটে মধ্যবিত্তের জন্য আয়করে ছাড়ের ঘোষণার পরে অর্থমন্ত্রী জানান, কেন্দ্রীয় সরকার ধার করে মধ্যবিত্তকে আয়করে ছাড় দিচ্ছে না। সরকার যে টাকা ধার করছে, তার সিংহভাগই পরিকাঠামো তৈরি বা মূলধনী খাতে খরচ করছে। যাতে আর্থিক বৃদ্ধি বাড়ে, কর্মসংস্থান তৈরি হয়। অর্থ মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, আগামী অর্থ বছরে রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্য জিডিপি-র ৪.৪ শতাংশ। এই ঘাটতি পূরণ করতেই বাজার থেকে সরকার ধার করবে। অন্য দিকে, পরিকাঠামো তৈরিতে খরচ হবে জিডিপি-র ৪.৩ শতাংশ। অর্থাৎ, সরকার যে টাকা ধার করবে, তার প্রায় পুরোটাই পরিকাঠামো তৈরিতে খরচ হবে, যাতে অর্থনীতির ইঞ্জিন জোর গতিতে ছুটতে পারে। এর পরে আয়করে ছাড় দেওয়ার ফলে মধ্যবিত্তের হাতে নগদ টাকা আসবে। মানুষ সেই টাকা হয় খরচ করবেন, না হলে সঞ্চয় করবেন। তাতে অর্থনীতিতে যে সুফল মিলবে, সেটা বাড়তি পাওনা।

বিরোধীদের বক্তব্য, আসলে মোদী সরকার যদি এখন বলে, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার দাওয়াই বা ‘স্টিমুলাস’ হিসেবে বাজারে কেনাকাটা বাড়ানোর জন্য আয়করে ছাড় দেওয়া হয়েছে, তা হলে সরকারকে নিজের ভুল মেনে নিতে হবে। কারণ মোদী সরকার প্রথমে কর্পোরেট সংস্থাকে কর ছাড় দিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করেছিল। তাতে কর্পোরেট সংস্থার মুনাফা ১৫ বছরে সর্বোচ্চ হওয়ার রেকর্ড ছুঁয়েছে। কিন্তু আর্থিক সমীক্ষাই বলেছে, কর্মীদের সেই ভাবে বেতন বাড়েনি। তার পরে মোদী সরকার পরিকাঠামোয় বিপুল খরচ করে আর্থিক বৃদ্ধি বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল। বাস্তবে আর্থিক বৃদ্ধির ৭ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে।

অর্থনীতিবিদদের প্রশ্ন, মোদী সরকার মানুষের হাতে টাকা তুলে দিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করলেও তাতে লাভ হবে কি? কারণ এক দিকে মানুষের হাতে নগদ তুলে দিলেও অন্য দিকে সরকার নিজেই খরচে ছাঁটাই করেছে। জিডিপি-র তুলনায় বাজেটের খরচ ক্রমাগত কমছে। জিডিপি-র তুলনায় কেন্দ্রীয় সরকারের মোট খরচ ২০২১-২২-এ ছিল ১৬.০৩%। গত অর্থ বছর, ২০২৩-২৪-এ সেটা কমে ১৫.০৪% হয়েছিল। এ বারের বাজেট অনুযায়ী, আগামী অর্থ বছরে তা কমে ১৪.১৯% হয়ে যাবে। জিডিপি-র তুলনায় কর বাবদ আয়ের হার গত তিন বছর ধরে ৭.৯ শতাংশে আটকে রয়েছে। ফলে খরচ ছাঁটাই করেই মোদী সরকারকে রাজস্ব ঘাটতিতে লাগাম পরাতে হচ্ছে। গরিবদের জন্য সরকার রাজস্ব খাতে যে খরচ করে, তার হারও কমছে। চলতি অর্থ বছরে পরিকাঠামো তৈরিতে যে পরিমাণ খরচের কথা ছিল, তার থেকে মোদী সরকার প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা কম খরচ করেছে। আয়করে ছাড় দেওয়ার জন্য এই ১ লক্ষ কোটি টাকাই সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হবে।

অর্থ মন্ত্রকের একটি সূত্রের বক্তব্য, পরিকাঠামোর পিছনে সরকারের খরচ করারও একটা সীমা রয়েছে। কারণ সরকারের পরিকাঠামো তৈরির ক্ষমতা সীমিত। কাগজে-কলমে পরিকাঠামো তৈরিতে বিপুল অর্থ বরাদ্দ করলেও বাস্তবের মাটিতে যত ইচ্ছে পরিকাঠামো তৈরি করা সম্ভব নয়। সেই কারণেই মোদী সরকার এক সময় পরিকাঠামো তৈরিতে খরচ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ালেও এখন তাতে রাশ টানতে হচ্ছে। আর্থিক মূল্যায়ন সংস্থা মুডি’জ রেটিং ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, আয়করে ছাড়ের ফলে অর্থনীতিতে গতি আসা মুশকিল। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন রাজকোষ ঘাটতি চলতি বছরের ৪.৮ % থেকে আগামী অর্থ বছরে ৪.৪%-এ নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছেন। কিন্তু মুডি’জ রেটিংসের মতে, এর ফলে সরকারের ঋণের বোঝা বিশেষ কমবে না। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের পাল্টা যুক্তি, কেন্দ্রীয় সরকারের মোট ঋণ চলতি অর্থ বছরে জিডিপি-র ৫৭.১% ছিল। আগামী অর্থ বছরে তা ৫৬.১ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। বাজেটের আর্থিক শৃঙ্খলা নীতিতে বলা হয়েছে, সরকার ষষ্ঠদশ অর্থ কমিশনের শেষে বা ২০৩১-এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের মোট ঋণ জিডিপি-র ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনতে উদ্যোগী হবে।

WhatsApp Group Join Now
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular