Demand || অর্থনীতিতে, চাহিদা (Demand) বলতে বোঝায় কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একজন ক্রেতার কোনো নির্দিষ্ট পণ্য বা পরিষেবা কেনার ইচ্ছা এবং সামর্থ্য। সহজভাবে বলতে গেলে, চাহিদা হলো কোনো জিনিস পাওয়ার জন্য ক্রেতার আগ্রহ এবং সেই জিনিসটি কেনার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক ক্ষমতা। শুধুমাত্র ইচ্ছা থাকলেই চাহিদা তৈরি হয় না, সেই ইচ্ছা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থও থাকতে হবে।
চাহিদা তিনটি শর্ত পূরণ করে:
- ইচ্ছা (Desire): কোনো পণ্য বা পরিষেবা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা।
- ক্ষমতা (Ability): পণ্য বা পরিষেবা কেনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বা সংস্থান থাকা।
- প্রস্তুতি (Willingness): নির্দিষ্ট দামে পণ্য বা পরিষেবাটি কেনার মানসিক প্রস্তুতি।
যদি এই তিনটি শর্তের মধ্যে একটিও অনুপস্থিত থাকে, তবে তাকে চাহিদা বলা যাবে না। যেমন, একজন দরিদ্র ব্যক্তির একটি দামি গাড়ি কেনার ইচ্ছা থাকতে পারে, কিন্তু তার ক্ষমতা না থাকায় সেটি চাহিদা হিসেবে গণ্য হবে না।
চাহিদার প্রকারভেদ (Types of Demand)
Demand || চাহিদা বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। কিছু প্রধান প্রকারভেদ নিচে আলোচনা করা হলো:
- প্রত্যক্ষ চাহিদা (Direct Demand): যখন কোনো পণ্য বা পরিষেবা সরাসরি ভোক্তাদের প্রয়োজন মেটায়, তখন তাকে প্রত্যক্ষ চাহিদা বলে। যেমন, খাদ্য, পোশাক, বই ইত্যাদি।
- পরোক্ষ চাহিদা (Indirect Demand): যখন কোনো পণ্য বা পরিষেবা অন্য কোনো পণ্য বা পরিষেবা উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়, তখন তাকে পরোক্ষ চাহিদা বলে। যেমন, কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি।
- যৌথ চাহিদা (Joint Demand): যখন দুটি বা ততোধিক পণ্য বা পরিষেবা একসাথে ব্যবহার করা হয়, তখন তাদের যৌথ চাহিদা বলে। যেমন, গাড়ি ও পেট্রোল, কলম ও কালি ইত্যাদি।
- প্রতিযোগিতামূলক চাহিদা (Competitive Demand): যখন দুটি বা ততোধিক পণ্য বা পরিষেবা একই প্রয়োজন মেটানোর জন্য বাজারে থাকে, তখন তাদের প্রতিযোগিতামূলক চাহিদা বলে। যেমন, চা ও কফি, মোবাইল ফোনের বিভিন্ন ব্র্যান্ড ইত্যাদি।
- মিশ্র চাহিদা (Composite Demand): যখন একটি পণ্য বা পরিষেবা একাধিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তখন তাকে মিশ্র চাহিদা বলে। যেমন, বিদ্যুৎ আলো জ্বালানো, পাখা চালানো, ফ্রিজ চালানো ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়।
Read More: TDS || একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা
চাহিদার নির্ধারক (Determinants of Demand)
Demand || চাহিদা বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। এর মধ্যে প্রধান নির্ধারকগুলি হলো:
- পণ্যের দাম (Price of the Product): সাধারণত, পণ্যের দাম বাড়লে চাহিদা কমে এবং দাম কমলে চাহিদা বাড়ে। এটি “চাহিদা বিধি” (Law of Demand) নামে পরিচিত।
- ক্রেতাদের আয় (Income of the Consumers): ক্রেতাদের আয় বাড়লে সাধারণত তাদের চাহিদা বাড়ে, বিশেষ করে স্বাভাবিক পণ্যের ক্ষেত্রে। তবে, নিম্নমানের পণ্যের ক্ষেত্রে আয় বাড়লে চাহিদা কমতে পারে।
সম্পর্কিত পণ্যের দাম (Prices of Related Goods): - বিকল্প পণ্য (Substitute Goods): যদি একটি পণ্যের দাম বাড়ে, তবে তার বিকল্প পণ্যের চাহিদা বাড়বে। যেমন, চায়ের দাম বাড়লে কফির চাহিদা বাড়বে।
- পরিপূরক পণ্য (Complementary Goods): যদি একটি পণ্যের দাম বাড়ে, তবে তার পরিপূরক পণ্যের চাহিদা কমবে। যেমন, গাড়ির দাম বাড়লে পেট্রোলের চাহিদা কমবে।
- ক্রেতাদের রুচি ও পছন্দ (Tastes and Preferences of the Consumers): ক্রেতাদের রুচি ও পছন্দের পরিবর্তন চাহিদাকে প্রভাবিত করে। যেমন, কোনো নতুন ফ্যাশন বাজারে এলে তার চাহিদা বেড়ে যায়।
- ভবিষ্যতের প্রত্যাশা (Expectations of Future Prices): যদি ক্রেতারা ভবিষ্যতে দাম বাড়ার সম্ভাবনা দেখে, তবে তারা এখনই বেশি পণ্য কিনতে পারে।
- জনসংখ্যা (Population): জনসংখ্যার বৃদ্ধি চাহিদাকে বাড়ায়।
- বিজ্ঞাপন (Advertisement): বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পণ্যের চাহিদা বাড়ানো যায়।
চাহিদা কীভাবে কাজ করে? (How Demand Works?)
চাহিদা বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চাহিদা এবং যোগানের পারস্পরিক ক্রিয়ার মাধ্যমে বাজারে পণ্যের দাম নির্ধারিত হয়। যদি কোনো পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে এবং যোগান কম থাকে, তবে দাম বাড়বে। আবার, যদি চাহিদা কম থাকে এবং যোগান বেশি থাকে, তবে দাম কমবে।
চাহিদা পরিবর্তনের ফলে বাজারে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব দেখা যায়:
- দাম পরিবর্তন (Price Changes): চাহিদা বাড়লে দাম বাড়ে এবং চাহিদা কমলে দাম কমে।
- পরিমাণ পরিবর্তন (Quantity Changes): চাহিদা বাড়লে বিক্রিত পণ্যের পরিমাণ বাড়ে এবং চাহিদা কমলে বিক্রিত পণ্যের পরিমাণ কমে।
- উৎপাদন পরিবর্তন (Production Changes): চাহিদা বাড়লে উৎপাদন বাড়ে এবং চাহিদা কমলে উৎপাদন কমে।
Demand || উদাহরণ (Examples):-
গরমে আইসক্রিমের চাহিদা বেড়ে যায়।
পুজোর সময় নতুন পোশাকের চাহিদা বেড়ে যায়।
মোবাইল ফোনের নতুন মডেল বাজারে এলে পুরনো মডেলের চাহিদা কমে যায়।
পেট্রোলের দাম বাড়লে গাড়ির বিক্রি কমে যায়।
কোনো নতুন স্বাস্থ্যকর খাবারের বিজ্ঞাপন দেখলে তার চাহিদা বেড়ে যায়।
